ইসলাম শিক্ষা - Islamic Study

চুরি

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - ইসলাম শিক্ষা - Islamic Study - আখলাক | NCTB BOOK

অন্যের সম্পদ বা টাকা-পয়সা গোপনে নিজের হস্তগত করাকে আমরা চুরি বলি। চোরের পেশা বা কাজই চুরি করা।

চুরির কারণ

সমাজে বৈষম্য বৃদ্ধির ফলে যখন অর্থনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হয় তখনই অভাবি-সুবিধা বঞ্চিত মানুষ ক্ষুধার তাড়নায় চুরি করে। অনেকে আবার লোভের বশবর্তী হয়ে চুরি করে। অনেক সময় সংঘবদ্ধ চক্র দরিদ্র ব্যক্তিদের আর্থিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাদেরকে চুরি করতে বাধ্য করে।

চুরির পরিণাম

চুরি একটি জঘন্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ। চুরির কারণে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে নানা দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। হঠাৎ করে সম্পদ হারিয়ে, সম্পদের মালিক নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয়। চোরের কারণে সবাই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। শান্তিতে ঘুমাতে পারে না। সম্পদ হারনোর দুশ্চিন্তায় সবার মানসিক প্রশান্তি নষ্ট হয়ে যায়।
চোর চুরি করতে গেলে তার অপরাধ চুরির মাঝে সীমাবদ্ধ থাকে না। সে অন্যান্য অপরাধে জড়িয়ে যায়। এছাড়া অপরাধীদের চক্রের সাথে তার সখ্য গড়ে ওঠে। চুরির পাশাপাশি, ডাকাতি, ছিনতাই, চোরাকারবার, অপহরণ, পাচার, মাদকাসক্তিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে যায়।

সবাই চোরকে ঘৃণা করে। তার সাথে সম্পর্ক রাখে না। চোরের পরিবারের সদস্যরাও অপমানিত ও খুণিত জীবন যাপন করে। নিকটাত্মীয় হলেও তার সাথে আত্মীয়তার পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করে। দুনিয়া ও আখিরাতে চোরকে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়। কোনো মুমিন ব্যক্তি কখনো অন্যের সম্পদ চুরি করতে পারে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, 'চোর যখন চুরি করে তখন সে ঈমানদার থাকে না'। (বুখারি)

চুরি করা হারাম। কোনো ব্যক্তি চুরি করাকে হালাল মনে করলে সে কাফির হয়ে যাবে।

চুরির প্রতিরোধে ইসলামের ভূমিকা

১. ইসলামি অনুশাসন মেনে চলা
প্রত্যেক মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের রক্ত, সম্পদ ও সম্মানে হস্তক্ষেপ করা নিষেধ। আমরা কখনো অন্যের কোনো বস্তু ছোটো হোক বা বড় হোক, না বলে নিব না। কারণ ছোটো কিছু একবার চুরি করলে শয়তান অন্য কিছু চুরি করতে প্ররোচিত করে। আমরা যা কিছু করি আল্লাহ সবকিছু জানেন, এই বিশ্বাস চর্চা করতে হবে 

২. সমাজে সাস্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা

ইসলাম দরিদ্র ও অভাবগ্রস্তদেরকে যাকাত প্রদানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সাম্য ও সমতা প্রতিষ্ঠার আদেশ দিয়েছে। বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। আশ্রয়হীন মানুষদের পুনর্বাসন করার চেষ্টা করতে হবে। কোনো এলাকায় অর্থনৈতিক সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে চুরির মতো অপরাধ হ্রাস পায়।

৩. সচেতনতা বৃদ্ধি

অনেক সময় আমাদের সম্পদ যথাযথ সংরক্ষণ না করার ফলে চোর চুরি করে। আমাদের উচিত নিজের মালিকানাধীন সম্পদ যথাযথ সংরক্ষণ করা। সামর্থ্য থাকলে আমরা চুরি প্রতিরোধ করার জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা নিতে পারি। ইসলামে চুরির মাল ক্রয় নিষিদ্ধ। তাই কখনো যদি সন্দেহ হয় যে এটি চুরি করা ভব্য তাহলে আমরা সেটি ক্রয় করা থেকে বিরত থাকবো।

৪. দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি

ক্ষুধার যন্ত্রণা না থাকলে, অভ্যাসগতভাবে কেউ চুরি করলে তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। একজন শাস্তি পেলে অন্যরা শাস্তির ভয়ে চুরি করা থেকে বিরত থাকবে। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-

والسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُوا أَيْدِيَهُمَا جَزَاءً بِمَا كَسَبَا نَكَالًا مِّنَ اللَّهِ

وَاللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ 

অর্থ: 'পুরুষ চোর আর নারী চোর, তাদের হাত কেটে দাও। এটি তাদের কৃতকর্মের ফল, আল্লাহর পক্ষ থেকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হিসেবে। আর অল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।' (সূরা আল মায়িদা, আয়াত: ৩৮)

তবে মনে রাখতে হবে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। চোরকে অনেক সময় গণপিটুনি দেওয়া হয় যেটা ইসলামে নিষিদ্ধ। কারণ এভাবে অনেক সময় নিরপরাধ মানুষ সন্দেহের বশবর্তী হয়ে শান্তি পায়। গণপিটুনিতে অনেকের মৃত্যু হয়ে যায়। বিচারক সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে শাস্তি দিবেন।

তবে কোনো অবস্থাতেই প্রমাণিত অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া থেকে বিরত রাখা জায়েয হবে না। হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, 'মাথঘুম গোত্রের এক নারী চুরি করলে, মহানবি (সা.)-এর প্রিয় পালকপুত্র উসামা বিন যায়িদ (রা.) মহানবি (সা.) এর সাথে তার ব্যাপারে কথা বললেন। মহানবি (সা.) উসামা (রা.)-কে বললেন, 'তুমি কি আল্লাহর নির্ধারিত সীমালঙ্ঘনকারিণীর শাস্তি মওকুফের সুপারিশ করছ?' অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) দাঁড়িয়ে খুতবায় বললেন, 'নিশ্চয়ই তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিসমূহকে এ কাজই ধধ্বংস করেছে যে, যখন তাদের মধ্যে কোনো সম্মানিত লোক চুরি করত, তখন তারা তাকে বিনা সাজায় ছেড়ে দিত। অন্যদিকে যখন কোনো দুর্বল লোক চুরি করত, তখন তার ওপর শাস্তি প্রয়োগ করত। আল্লাহর কসম, যদি মুহাম্মাদ (সা.) এর কন্যা ফাতিমাও চুরি করত, তাহলে আমি অবশ্যই তাঁর হাত কেটে দিতাম।' (বুখারি)

ইসলাম অর্থনৈতিক সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বারোপ করেছে, যাতে অভাবের তাড়নায় কেউ চুরি না করে। উমর (রা.) রাতের আঁধারে ছদ্মবেশে নাগরিকদের খোঁজখবর নিতেন, প্রয়োজনে তাদের ঘরে খাবার পৌঁছে দিতেন। একইভাবে ক্ষুধার তাড়নায় কেউ চুরি করলে তার হাত কাটা যাবে না। কোনো এলাকায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিলেও চুরির শাস্তি হিসাবে হাত কাটা যাবে না। কারণ তখন এমন অনেকেই চুরি করতে পারে, যে আসলে স্বভাবগতভাবে চোর নয়। আমাদের উচিৎ নিজে সচেতন হওয়া অন্যকে সচেতন করা।

প্রতিফলন ডায়েরি লিখন
'আখলাকে যামিমাহ বর্জন করে আমি নিজেকে পরিশুদ্ধ রাখি'
উল্লিখিত শিরোনামের আলোকে তুমি তোমার দৈনন্দিন জীবনে (পরিবার, বিদ্যালয়) আখলাকে যামিমাহ থেকে কীভাবে নিজেকে দূরে রাখো/রাখবে তা প্রতিফলন ডায়েরিতে লিখে আনবে। এক্ষেত্রে পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য, সহপাঠী, শিক্ষকের সহায়তা নিতে পারো।

 

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion